
জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার সন্তানদের জিম্মা নিয়ে আদালত রায় দিয়েছে অবশেষে।
জাপানি নাগরিক মা নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবা ইমরান শরীফের ৩ কন্যা সন্তানের মধ্যে ২ জন তাদের বাবার জিম্মায় থাকবে বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। মা বছরে ৩ বার ১০ দিন করে মেয়েদের সাথে একান্তে নিজের মত সময় কাটাতে পারবেন। সন্তানদের জিম্মা নিয়ে আদালত রায় ঘোষনা করেন।
পৃথক রিটের শুনানি শেষে বরিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট এর বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
মিসেস এরিকো এবং ইমরান তাদের ৩ সন্তানকে নিয়ে জাপানে থাকলেও, চলতি বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাবা ইমরান শরীফ তার ৩ মেয়ের মধ্যে বড় ২ মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
পেশায় চিকিৎসক তাদের জাপানি মা এরিকো গত ১৮ই জুলাই, ২০২১ ছোট মেয়ে টিকে নানির কাছে রেখে টোকিও থেকে ঢাকায় আসেন।
তারপর এবং দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পাওয়ার জন্য ১৯শে অগাস্ট, ২০২১ হাইকোর্টে রিট করেন।
ওই রিট আবেদনে সন্তানদের অবস্থান জানাতে অস্বীকৃতি এবং তাদের সাথে দেখা করতে না দেয়ার অভিযোগও আনা হয় বাবা ইমরান শরীফ এর বিরুদ্ধে।
এই খবর নিয়ে সে সময় ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।
আদালতের আদেশে আরও যা বলা হয়েছে
রিটের শুনানির পর আদালত নির্দেশ দিয়েছে, বছরে ৩ বার মায়ের জাপান থেকে সন্তানদের সাথে দেখা করতে আসার এবং থাকার সব ধরনের খরচ বাবাকে বহন করতে হবে।
এর বাইরেও মা চাইলে যেকোনো সময় তার সন্তানদের সাথে দেখা করতে বাংলাদেশে আসতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে সব ধরনের খরচ মায়ের নিজেই বহন করতে হবে।
সেইসঙ্গে প্রতি সপ্তাহে ২ বার মেয়েদের সাথে ভিডিও কলে মায়ের যোগাযোগের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গত জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত জাপানি এই মায়ের বাংলাদেশে থাকাকালীন যত ধরনের খরচ হয়েছে সেই বাবদ সন্তানদের বাবাকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
যেকোন সময় যদি উভয় পক্ষ আদেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত অসুবিধার বা বাঁধার সম্মুখীন হলে, তারা আদালতের কাছে আসতে পারবেন।
তাদের আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালতে মামলাটি চলমান থাকবে। মূলত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এই আদেশ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন
ই-কমার্স গেটওয়েতে আটকা টাকা ফেরত দিতে রুল
বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে চেয়ে ‘ধর্ষণের হুমকি’ পাওয়ার অভিযোগে ছাত্রী বিক্ষোভ
রিটে কী অভিযোগ আনেন জাপানি মা
রিটে অভিযোগ করা হয়, টোকিওতে থাকাকালীন স্কুল বাসে করে বাড়ি ফেরার পথে ৩ কন্যার মধ্যে বড় ২জনকে তার অগোচরে অন্য কোথাও নিয়ে যান তাদের বাবা।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি মেয়েদের জন্য পাসপোর্ট করান এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি তাদের নিয়ে দেশে চলে আসেন।
রিট আবেদনে ওই জাপানি মা আরও অভিযোগ করেন যে, ঢাকা এসে পৌঁছানোর পর মায়ের সাথে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয় ঠিকই, কিন্তু সে সময় তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে, চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে গাড়িতে করে অজ্ঞাত কোন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেভাবেই ৫ মাস পর সন্তানদের সাক্ষাত পান তিনি।
উল্লেখ্য, বিগত ১২ বছর ধরে বিবাহিত এই দম্পতি টোকিওতে বসবাস করতেন। তাদের ৩ কন্যা সন্তান রয়েছে।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে জাপানের আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন শিশুদের বাবা। জাপানি নারীর আইনজীবী শিশির মনির এসব কথা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন।
তবে তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন বিচ্ছেদ হয়নি। তারা সম্পর্কে এখনো স্বামী-স্ত্রী আছেন বলে বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম জানান।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন,”বিয়ের সময় ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন জাপানি মা নাকানো এরিকো। তার স্বামী চাইছিলেন সন্তানদের মুসলিম রীতি নীতিতে বড় করতে। এবং তা নিয়েই তাদের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়।”
বাবার পাল্টা রিট
এর আগে টোকিও থাকাকালীন সন্তানদের জিম্মা নিয়ে জাপানেও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন নাকানো এরিকো।
পরে জাপানের একটি পারিবারিক আদালত সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে মে মাসে মায়ের অনুকূলে রায় দিয়ে ২ কন্যা সন্তানকে তার কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেয়।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন মিসেস এরিকো। কিন্তু করোনাভাইরাস এর জন্য টোকিও থেকে এতদিন তিনি বাংলাদেশে আসতে পারেননি।
অবশেষে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এরিকো মেয়েদের নিতে ঢাকায় আসেন।
জুলাই মাসে ঢাকায় এসে রিট করার পর তাদের বাবাও সন্তানদের জিম্মায় পেতে বাংলাদেশের পারিবারিক আদালতে পাল্টা রিট করেন।
এছাড়া জাপানে থাকা ছোট মেয়ের জিম্মা দাবি করেও গত মাসে ইমরান শরীফ রিট আবেদন করেছিলেন। তবে ওই আবেদন আদালত সাথে সাথেই খারিজ করে দেয় বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ইমরান শরীফের পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম বলেছেন, শিশুদের বাংলাদেশি এবং আমেরিকা এই ২ ধরনের পাসপোর্ট রয়েছে এবং বাংলাদেশে আসার পর বাচ্চাদের জিম্মায় পেতে সেখানে পারিবারিক আদালতে ইমরান শরীফও মামলা করেন।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।