প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন থেকে সব শ্রেণি পেশার নাগরিক পেনশন পাবেন। এর মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য দূর হবে।”
চার শ্রেণির নাগরিককে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে দেশে প্রথমবারের মত চালু হল সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে সব শ্রেণি পেশার নাগরিক পেনশন পাবেন এ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “এখন থেকে সব শ্রেণি পেশার নাগরিক পেনশন পাবেন। এর মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য দূর হবে।”
সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ নিয়মিত চাঁদা দিয়ে এই পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন। এর অংশ হতে পারবেন প্রবাসীরাও। এর মাধ্যমে প্রায় দশ কোটি নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
আর পড়ুনঃ ইস্তাম্বুলে ঘরবন্দি ইউরোপের স্বপ্ন, বন্দিশিবিরে ভয়ঙ্কর জীবন
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ যা অঙ্গীকার করে, তা বাস্তবায়ন করে দেখায়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম তার প্রমাণ।”
প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা- এই চার নামে চার শ্রেণির মানুষের জন্য আলাদা স্কিম চালু হল বৃহস্পতিবার। আরও দুটি স্কিম পরে সুবিধাজনক সময়ে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এর মধ্যে প্রবাস স্কিম শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। যেসব প্রবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।
প্রগতি স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক এতে অংশ নিতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ কাঙ্গাল হরিনাথের ছাপাখানা জাদুঘরে যাচ্ছে
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেল, তাঁতিরা অংশ নিতে পারবেন সুরক্ষা স্কিমে।
আর দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা (যাদের বর্তমান আয়সীমা বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) সমতা স্কিমে অংশ নিয়ে পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন।
এসব স্কিমের চাঁদার কিস্তি পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। চাঁদা দেওয়ার সময়ের ভিত্তিতে চারটি স্কিমের জন্যই মাসিক চাঁদার পরিমাণ এবং পেনশনের পরিমাণ আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সব শ্রেণি পেশার নাগরিক পেনশন পাবেন স্কিমে অংশ নিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। পেনশন–ব্যবস্থা পরিচালনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছ অর্থ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
এই পেনশন কর্মসূচির খুঁটিনাটি ঠিক করে গত রবিবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা জারি করে অর্থ বিভাগ।
সেখানে বলা হয়, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সব বাংলাদেশি নাগরিক নিজেদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশ নিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে চাঁদা দিয়ে গেলে ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন মিলবে।
৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ মারা গেলে তার নমিনি মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়ার বাকি সময় মাসিক ভিত্তিতে পেনশন পাবেন।
১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কেউ মারা গেলে জমা হওয়া অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন নমিনি। পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং মাসিক পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরাও পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। তবে কোনো স্কিমে অংশ নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।
নিবন্ধনের কাজটি করতে হবে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে। পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সেখানে দেওয়া আছে।
অনলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করলে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে।
আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা জমা দেওয়ার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হওয়ার পর পেনশন কর্তৃপক্ষ ধার্যকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা দেওয়া যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
সকল স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে।
চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে এসএমএম দিয়ে জানান হবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা না দিলে জরিমানার পরিমাণসহ জানিয়ে দেওয়া হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানিকভাবে পেনশন স্কিমে অংশ নিলে প্রতিষ্ঠান ও তার কর্মীদের চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে জমা দিতে হবে।
নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা দিতে না পারলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা জমা দেওয়া যাবে। এক মাস পার হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাব সচল রাখা যাবে।
কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে তিন কিস্তির চাঁদা জমা না দিলে তার পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। তবে নির্ধারিত বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমা দিয়ে হিসাব সচল করা যাবে।
মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম জমা দেওয়া যাবে।
কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে তাকে অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করতে পারবেন। অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা না দিলেও পেনশন হিসাব স্থগিত হবে না।
চাঁদাদাতা বা পেনশনার নিখোঁজ হলে কীভাবে তা নিষ্পত্তি করা হবে বিধিমালায় সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলা আছে।
পেনশন স্কিমে চাঁদাদাতাকে নমিনী মনোনয়ন করে দিতে হবে। নমিনী মারা গেলে নতুন নমিনী মনোনয়ন করতে হবে।
চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিয়ের জন্য খরচ করতে পেনশন স্কিমে জমাকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে নিতে পারবেন। ঋণ হিসেবে নেওয়া অর্থ পেনশন কর্তৃপক্ষ ধার্য করা ফিসহ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
চাঁদার হার
এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা, সাড়ে ৭ হাজার টাকার কিস্তিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ১০ হাজার টাকার কিস্তিতে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা।
এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ২ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।
এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ১ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৩৪ হাজার ৫৬৫ টাকা, ২ হাজার টাকার কিস্তিতে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।
দিনবার্তা | সব সময়, সব খানে
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি।
কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।
Copyright © 2025 DinBarta. All rights reserved.