
পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক ড. আবদুল কাদির খান সম্পর্কে কতটা জানেন?
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক বিজ্ঞানী ড. আবদুল কাদির খান। তিনি এ কিউ খান নামেও পরিচিত। বিশ্বের প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার অধিকারী হওয়ার পেছনে তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
আবার উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের কাছে পরমাণু বোমার তথ্য পাঁচারের জন্য অভিযোগও রয়েছে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক এই পরমাণু বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে। একদিকে তিনি বিশ্বব্যাপী পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক হিসেবে পরিচিত, আবার ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কাছে তার পরিচয় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির গডফাদার।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তান ভ্রমনের নিয়মাবলী
১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল ডা. আব্দুল কাদের খান অবিভক্ত ভারতের ভূপালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যান। করাচিতে পড়াশোনা করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যান। ইউরোপে ১৫ বছরের প্রবাস জীবনে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট বার্লিন এবং নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব ডেলফ্ট এবং বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব ল্যুভেনে পড়াশোনা করেন।
তিনি ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বর এমআইসিক্স- কর্মকর্তাদের একটি বিমানে লিবিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সামরিক সমঝোতার গোপন মিশনে যান। প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক প্রযুক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। যাদের কাছে এই প্রযুক্তিগুলো ছিল এবং যারা এই প্রযুক্তি চাইতো দুই পক্ষের কাছেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন এ কিউ খান।
তিনি উনিশশো সত্তুরের দশকে নেদারল্যান্ডে কাজ করছিলেন। সেই সময় মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং ভারতের পরমাণু অগ্রগতির আশঙ্কার বোমা তৈরির জন্য নতুন করে প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি ইউরোপে একটি সেন্ট্রিফিউজ ডিজাইন নকল করতে সক্ষম হন। এবং তারপরে তিনি দেশে ফিরে যান। তিনি একটি গোপন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। যে সংগঠনের সদস্যরা ইউরোপিয়ান ব্যাবসায়ী। এবং যারা মূলত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করত।
এ কিউ খান খুব সাবধানে কাজ করেছেন যা তাকে নায়ক করে তুলেছিল। তিনি ভারতের হুমকির মুখে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন বলে ধরা হয়। তিনি তার গোপন নেটওয়ার্ককে আমদানির পরিবর্তে রফতানির কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেন। তিনি এমন কয়েকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন যেগুলোকে পশ্চিমারা দুবৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে।
ইরান যে সেন্ট্রিফিউজ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে সেটি যে নকশা এবং দ্রব্য দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সেগুলো এ কিউ খান সরবরাহ করেছিলেন। এ কিউ খান উত্তর কোরিয়ায় ১২ বারেও বেশি বার সফর করেছেন। ধারণা করা হয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির বিনিময়ে পরমাণু প্রযুক্তি আদান-প্রদান হয়েছিল।
এ কিউ খান তার দেশের নেতৃত্বের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর পশ্চিমাদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে চেয়েছিলেন। তার প্রশ্ন ছিল যে, কেন কিছু দেশকে নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া উচিত, অন্যদেরকে কেন নয়?
১৯৯০ এর দশকে লিবিয়ান চুক্তিতে পাকিস্তান আর্থিকভাবে লাভবান হলেও সেটি তাদের পতন তরান্বিত করেছিল। ব্রিটেনের এম আর সিক্স এবং আমেরিকার সিআইএ খানকে ট্র্যাক করতে শুরু করেছিল। তারা তার সফরের ওপর নজর রেখেছে, ফোন কলে আড়ি পেতেছে। তারা খানের সংগঠনের সদস্যদের এজেন্ট হওয়ার জন্য প্রচুর অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
জীবনের শেষ দিন গুলোতে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্রমণ এবং কথা বলা বন্ধ করে দেন। তিনি এমন অদ্ভূত এক জীবন যাপন করেছিলেন। যেখানে তিনি মুক্তও নন আবার বন্দিও নন। কেন তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা কখনোই জানা যাবে না। তবে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক ড. আবদুল কাদির খান পাকিস্তানী জনসাধারণের কাছে নায়ক হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন।
সূত্র: বিবিসি
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।