ঢাকারবিবার, ৮ই জুন, ২০২৫

কুষ্টিয়ার খোকসায় নৌকায় ভোট দেওয়ায় আবার ও ১০ বাড়িতে হামলা, ভাংচুর

সজল রায়
আগস্ট ৬, ২০২২ ২:২১ পূর্বাহ্ণ
শেয়ার করুন:-
Link Copied!

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় নির্বাচনের আমেজ গেলেও যায়নি পরবর্তী সহিংসতা। নৌকায় ভোট দেওয়ায় অপরাধে কয়েক দফায় ৮ থেকে ১০ টি বাড়ি ও একটি দোকানে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের বহরুমপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে। হামলায় শিশুসহ আহত হয়েছেন দুই জন। টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্রসহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন প্রশাসনের ব্যর্থতায় বারবার এমন হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু পুলিশ বলছে দলীয় ক্রন্দল ও উচ্চপদস্ত নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এমন ঘটনা ঘটছে।

আরও পড়ুনঃ সারা দেশের ন্যায় খোকসাতে ১২৭ জন ভূমিহীন গৃহহীনকে জমিসহ ঘর প্রদান

হামলার শিকার ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, রেজাউল আলম বাদশা, আলম শেখ, সাদেক আমিরুল, শামীম মেম্বর, আমজাদ, আব্দুল আজিজসহ অনেকে। আহরা হলেন ওই গ্রামের মমিনুর রহমানের স্ত্রী নাজমা খাতুন (৩০) ও আমজাদ হোসেনের কন্যা শোভা (১২)। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে জানিপুর ইউনিয়নের বহরুমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৮ থেকে ১০ টি বাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে। আতঙ্কিত গ্রামবাসী। পুলিশের টহল রয়েছে এলাকায়।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত ২৬ ডিসেম্বর জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হবিবুর রহমান ও আনারস মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ। ভোটে নৌকাকে ৬৭ ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আব্দুল মজিদ। নির্বাচনের পর থেকেই দুই প্রার্থী ও সমর্ষকদের মধ্যে চলছে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, ভাংচুর ও হামলা।

আরও পড়ুনঃ বাইক কিনে না দেওয়ায় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রের আত্মহত্যা

এরই জের ধরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধায় ও রাত ১১ টার দিকে নৌকার সমর্থকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের সমর্থক আকাশ, আশিক, লাল্টু, শাওন, ইউনুস আলী বিশ্বাস, রাসেল, রিপনসহ অনেকে। হামলায় ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বর শামীমেরর বাড়ি সহ ৮ থেকে ১০ টি বাড়ি ও একটি দোকানে ভাংচুর করা হয়। এতে টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র মালামালসহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

হামলার শিকার পরিবারের সদস্য সুত্রে জানা গেছে, গেল নির্বাচনে তারা নোকায় ভোট দিয়েছেন। সেজন্য স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের লোকজন বারবার হামলা চালিয়ে আসছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধায় প্রথম দফায় তাঁরা হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে পুলিশ চলে গেলে রাত ১০ টার দিকে আরেক দফায় বড় ধরনের হামলা চালায়।

হামলার শিকার জাহাঙ্গীর আলম বাদশা বলেন, ‘ বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। সারা জীবন নৌকায় ভোট করেছি। গেল নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিয়েছি। সেই অপরাধে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত মজিদ চেয়ারম্যান তাঁর লোকজন দিয়ে বারবার হামলা চালিয়েছে। হামলায় ভাতিজিসহ দুইজন আহত হয়েছে। ‘

৬ নং ওয়ার্ড মেম্বর শামীম বলেন, ‘১০ বছর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এখন আওয়ামী লীগের লোকজন জামাত বিএনপি নিয়ে বারবার হামলা করছে। প্রশাসনের ব্যর্থতায় তাঁরা হামলার সুযোগ পাচ্ছে। এবার অন্তত ১০ টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি করেছে।’

আরও জানুনঃ কুষ্টিয়া থেকে ট্রেনের সময়সূচী

ক্ষতিগ্রস্থ আমজাদ বলেন, ‘নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে চেয়ারম্যানের লোকজন রাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভাংচুর করেছে। প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

সাদেক মোল্লা স্ত্রী হাবিদা খাতুন বলেন, ‘ প্রথমে সন্ধায় একবার আক্রমণ করে। পরে পুলিশ আসে। পুলিশ চলে গেলে রাত ১০ টার দিকে আরেক বার হামলায় চালায়। টিভি, ফ্রিজ, ঘরের আসবাবপত্র সব ভেঙে ফেলেছে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী হবিবর রহমান বলেন, ‘ নৌকায় ভোট করায় সমর্থকদের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা চালিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তার হামলাকারীদের ইন্ধন দিচ্ছেন।’

জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ এলাকায় ভাংচুরের কথা শুনেছি। তবে আমি বা আমার লোকজন এ কাজ করিনি। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে দল করি। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও দলের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছি।

এবিষয়ে খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, গত ইউপি নির্বাচন থেকে নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মাঝে বিবাদ এখনো চলমান। তারই জের ধরে গতকাল প্রতিপক্ষরা শামীম মেম্বর ও তার সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা চালায়। এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ পাইনি,অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Facebook Comments Box

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।