spot_img
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
29 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
spot_img
আরও
    DinBartaবিশেষ বার্তাতারেক-মামুনের খাম্বা বাণিজ্য: বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের কলঙ্কময় ইতিহাস
    spot_imgspot_img

    তারেক-মামুনের খাম্বা বাণিজ্য: বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের কলঙ্কময় ইতিহাস

    ২০০৩ সালের মার্চ মাস। সারাদেশে প্রচণ্ড গরম। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হয়ে এসেছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেই সেই প্রকল্পগুলো বাতিল করে।

    বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সংস্কারের কাজও বন্ধ করে দেয়। সে সময় লোডশেডিং এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, ঢাকায় সারাদিনে মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয়। গরমে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত হয়। ঢাকার বাইরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। পল্লী বিদ্যুতের ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ধান চাষের সেচকার্য বন্ধ হয়ে যায়।

    আরও পড়ুনঃ সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার তিন সাংবাদিক

    সেই অসহনীয় পরিস্থিতির এক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাবিতে ফুঁসে ওঠা কৃষকদের ওপর গুলি চালানো হয় খালেদা জিয়ার নির্দেশে। মারা যান ২০-৩০ জন কৃষক। সেই সময়কার কথা এখনও ভোলেননি দেশের সচেতন মানুষ।

    এমন সময় পরিস্থিতি জটিল দেখে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তার মূখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকীকে নির্দেশ দিলেন দ্রুত কিছু একটা করার জন্য। ড. সিদ্দিকী দ্রুত কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করলেন।

    কয়েক দফা বৈঠকের পর কামাল সিদ্দিকী একটি প্রস্তাবনা তৈরি করলেন। প্রস্তাবনার মূল বক্তব্য ছিল, কুইক রেন্টালের মাধ্যমে আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলা। ক্যাবিনেটে মূখ্য সচিব বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় তার প্রস্তাবনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবের ব্যাপারে একটি কথাও বলেননি। বৈঠক শেষ হলো সিদ্ধান্ত ছাড়াই।

    দুই দিন পর ড. কামাল সিদ্দিকীকে ফোন করলেন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। কামাল সিদ্দিকীকে বিদ্যুৎ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে ডাকা হয় হাওয়া ভবনে। সেখানে বৈঠকে তারেকের সঙ্গে ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন।

    ড. কামাল সিদ্দিকী তার প্রস্তাবনা ব্যাখ্যা করলেন। তারেক তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললেন আমরা সারাদেশে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দিতে চাই। তবে এজন্য আগে দরকার বিদ্যুতের খুঁটি। সারা দেশে আগে বিদ্যুতের খুঁটি সরবরাহের ব্যবস্থা করুন।

    ড. কামাল সিদ্দিকী একটু বিব্রত হলেন। কিন্তু টিপিক্যাল আমলা তিনি। বললেন, এটা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে ভালো। কিন্তু এখনই এ দিয়ে কোনো উপকার হবে না। তাছাড়া একসঙ্গে সারাদেশে খুঁটি লাগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ দিতে না পারলে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।

    এবার তারেক ক্ষেপে গেলেন। বললেন, আপনি সরকারি চাকরি করেন, ‘জনগণ’ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। অবিলম্বে বিদ্যুতের খুঁটি কেনার ব্যবস্থা করেন। কামাল সিদ্দিকী বুঝে গেলেন ঘটনা কী। কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে এলেন।

    এদিকে বিদুৎ সংকট নিরসনে বিশ্বব্যাংক ১০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসে। ড. সিদ্দিকী তার কুইক রেন্টাল প্রস্তাব দাঁড় করিয়েছিলেন মূলত বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্বব্যাংক বিশাল সহায়তা প্রস্তাব নিয়ে আসে।

    কিন্তু বিশ্বব্যাংককে ড. কামাল সিদ্দিকী জানিয়ে দেন, এরকম কুইক রেন্টাল প্রস্তাবে সরকার রাজি নয়। সরকার সারাদেশে বিদ্যুতায়নের দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাব নিয়ে কাজ করতে চায়।

    ড. কামাল সিদ্দিকীর ইশারায় বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা বুঝে গেলেন কী ঘটতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ২০০৩-এর ডিসেম্বরে এক বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিলো।

    ২০০৩-০৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাঘাবাড়ী ও আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিএমআরই’র জন্যই বরাদ্দ ছিল ৫৭০ কোটি টাকা।

    কিন্তু তারেক রহমানের নির্দেশে বাঘাবাড়ী ও আশুগঞ্জের সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলো। জানুয়ারি ২০০৪ সালে টেন্ডার ডাকা হলো বিদ্যুতের খুঁটি ক্রয়ের। প্রথম টেন্ডারটি ছিল আন্তর্জাতিক দরপত্র। যাতে বিদেশি কোম্পানির টেন্ডারে অংশ গ্রহণের সুযোগ ছিল।

    কিন্তু তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের হস্তক্ষেপে ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে গেল। টেন্ডারের শর্ত এবং স্পেফিকেশন এমনভাবে তৈরি করা হলো, যেন শুধু মামুনের কোম্পানি একা টেন্ডার জমা দিতে পারে।

    প্রথম বছর বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ৬৮৫ কোটি টাকার খুঁটি কিনল। দ্বিতীয় বছর কিনল আরও ৫২২ কোটি টাকার খুঁটি। আর এসব খুঁটি সরবরাহ করল একটি কোম্পানি, যার নাম ‘খাম্বা লিমিটেড’। যে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জিগরি দোস্ত গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। যাকে পরবর্তীতে দেশবাসী চিনল ‘খাম্বা মামুন’ নামে।

    খাম্বা কেনা হলো, কিন্তু তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ মিলল না। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেল। দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষকদের আন্দোলন চরমে উঠল। যার ফলশ্রুতিতে কানসাটে কৃষকদের প্রতিবাদ সমাবেশের ওপর গুলি চালানো হয়, মারা যান বহু কৃষক।

    এসব ঘটনার বছরখানেক পরে, ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দিনের সরকার বিএনপি-জামায়াত সরকারের কেনা খাম্বার স্টকলিস্ট করতে গিয়ে দেখল সমুদ্র চুরি! যে দামে সরকার খাম্বা লিমিটেড এর কাছ থেকে এসব খুঁটি কিনেছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তার দাম ৪ গুণ বেশি!

    তারচেয়েও বড় কথা, যে পরিমাণ ‘খাম্বা’ দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল, বাস্তবে সরবরাহ করা হয়েছিল তার মাত্র ২৫%। অথচ ‘খাম্বা মামুন’ পুরো বিল তুলে নিয়েছিলেন বন্ধু তারেক রহমানের ক্ষমতার জোরে।

    সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে আজ বাংলাদেশের। বাংলাদেশের জনগণ এখন শতভাগ বিদ্যুতের আওতায়। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেসব অঞ্চলে সরকার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বা সোলার পাওয়ারের আওতায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।

    সাধারণ মানুষ এখন বিএনপি-জামায়াত সরকারের আইয়ামে জাহেলিয়াতের (অন্ধকার যুগ) কথা মনেও করতে চায় না।

    spot_imgspot_img

    ফলো করুন-

    সম্পর্কিত বার্তা

    জনপ্রিয় বার্তা

    সর্বশেষ বার্তা