এনসিপি নেতাকর্মীদের অনেকেই শাপলাকে প্রতীকের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়ে প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ চেয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যা উসকে দিয়েছে নতুন প্রশ্ন।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের প্রতীকের তালিকায় শাপলা নেই। এক সপ্তাহ আগে আরেকটি দল শাপলা চেয়ে ইসির সাড়া পায়নি। এ অবস্থায় এনসিপি মার্কা হিসেবে শাপলা পেতে পারে?
রোববার নির্বাচন কমিশনে এনসিপির নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার পর সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, তারা তিনটি ‘মার্কার’ জন্য আবেদন করেছেন। শাপলা, কলম ও মোবাইল। তবে তাদের প্রথম পছন্দ শাপলা।
দলটির নেতাকর্মীদের অনেকেই শাপলাকে প্রতীকের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন দলের নাম
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অবশ্য বলেছেন, দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ পেতে কোনো আইনগত বাধা তারা দেখছেন না।
জাতীয় প্রতীক শাপলা চেয়েও পায়নি নাগরিক ঐক্য
গত বছর ২ সেপ্টেম্বর মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যকে নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় নির্বাচন কমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ-১৯৭২ অনুযায়ী নাগরিক ঐক্যকে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে। তাদের নিবন্ধন নম্বর ৫২ এবং দলটির প্রতীক হিসেবে দেওয়া হয়েছে ‘কেটলি’।
এরপর গেল মঙ্গলবার নিজেদের কেটলি প্রতীকের বদলে শাপলা বা দোয়েল পাখি বরাদ্দ চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে নাগরিক ঐক্য।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের কাছে এ আবেদন জমা দেওয়ার পর জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবের একান্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেছিলেন, “এ দুটি তো জাতীয় প্রতীক। সচিব মহোদয় তাদের অন্য প্রতীক চেয়ে নতুন করে আবেদনের পরামর্শ দিয়েছেন।”
অর্থাৎ, শাপলাকে জাতীয় প্রতীক বিবেচনায় এ আবেদন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তাহলে এনসিপি শাপলা প্রতীক পেতে পারে?
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “চাইতে তো তারা পারে। একসাথে তিনটি দল একটি প্রতীক চাইতে পারে না? চাইতে পারে।
“কিন্তু আমাদের যেটা বলা হয়েছে, যেহেতু এটা জাতীয় ফুল, জাতীয় প্রতীক, এটা দেওয়া যাবে না। তো সেই হিসেবে তাদেরকেও দিতে পারবে না। যদি দেয়, তাহলে প্রশ্ন তুলব।”
এনসিপি যদি শাপলা প্রতীক বরাদ্দ পায়, তাহলে নাগরিক ঐক্য কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আগেই কেন উদ্যোগ নেব। তারা কী করে দেখি। যদি না দেয়, তাহলে উদ্যোগ নেওয়ার কী আছে।”
জাতীয় প্রতীক শাপলা নিয়ে বিধিমালা কি বলছে
নির্বাচন কমিশনের ২০০৮ সালের সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় ৬৪টি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, কোনো প্রতীদ্বন্দী প্রার্থীকে, এই বিধির বিধানাবলী সাপেক্ষে অনুচ্ছেদ ২০ এর দফা (১) এরে অধীন নিম্নলিখিত প্রতীকগুলো থেকে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যবে।
এগুলো হল–আপেল, আম, উদীয়মান সূর্য, একতারা, কবুতর, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, কাস্তে, কুমির, কুলা, কুড়াল, কুঁড়েঘর, কোদাল, খাট, খেজুর গাছ, গরুর গাড়ি, গাভী, গামছা, গোলাপফুল, ঘণ্টা, চাকা, চাবি, চেয়ার, ছড়ি, ছাতা, ট্রাক, টেলিভিশন, ডাব, তবলা, তারা, তরমুজ, দাবাবোর্ড, দালান, দেওয়াল ঘড়ি, ধানের শীষ, নোঙ্গর, নৌকা, ফুলকপি, ফুলের মালা, বাঘ, বটগাছ, বাই-সাইকেল, বাঁশি, বেঞ্চ, বেলুন, মই, মটরগাড়ি (কার), মশাল, মাছ, মাথাল, মিনার, মোমবাতি, রকেট, রিক্সা, লাঙল, শঙ্খ, সিংহ, স্যুটকেস, হাত (পাঞ্জা), হাত ঘড়ি, হাত পাখা, হাতুড়ি, হারিকেন, হুক্কা।
এসব প্রতীকের মধ্যে শাপলা নেই। শাপলা ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না সে বিষয়েও বিধামালায় সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।
কেন জাতীয় প্রতীক শাপলা চায় এনসিপি?
রবিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপি প্রতিনিধি দল। পরে নির্বাচন ভবনের নিচে নেতাকর্মীদের নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম পছন্দ শাপলা। আশা করছি, জনগণের মার্কা হিসেবে, গণঅভ্যুত্থানের মার্কা হিসেবে, গ্রাম বাংলার প্রতীক হিসেবে এনসিপি শাপলা পাবে। শাপলা মার্কা নিয়ে আগামী দিনে নির্বাচনে অংশ নেব।”
জাতীয় প্রতীক শাপলা কীভাবে এনসিপি বরাদ্দ পাবে– এ প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “ইসির যে আইন-বিধি আমরা পর্যালোচনা করেছি, সেই আইনগুলোতে এ ধরনের কোনো বাধা নিষেধ নেই। জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল একটি দলের মার্কা হিসেবে রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখিনি বলে আমরা এটিতে (শাপলা) আবেদন করেছি।”
জাতীয় প্রতীকের যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, সে প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, জাতীয় প্রতীক কেবল শাপলা নয়; শাপলা, ধানের শীষ, তারকা-এগুলো মিলিয়ে জাতীয় প্রতীক।
“ধানের শীষ, তারকা বা তারা – এ দুটোও দুটি দলের মার্কা হিসেবে রয়েছে। ফলে সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনগত সমস্যা দেখি না। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। আমরা শাপলাকে মার্কা হিসেবে নিয়েছি। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সবার কাছে পরিচিত শাপলা। সাধারণের দল হিসেবে আমরা শাপলাকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে আবেদন করেছি।”
নাগরিক ঐক্যও যে ‘শাপলা’ চেয়েছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “একটি দলের কথা বলেছিলেন, উনারা একটি প্রতীক অলরেডি পেয়েছেন। বিদ্যমান তালিকা থেকে যদি নিষ্পত্তি হয়ে যায়, বর্তমানে যে প্রতীক (শাপলা) চেয়েছে, সেটা নেই (বিধিমালায়)। ফলে এটার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।”
প্রতীক হিসেবে জাতীয় প্রতীক শাপলা ব্যবহার করা যাবে?
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, পতাকা এবং প্রতীক সম্পর্কিত ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ১৩০ নম্বর আদেশের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হবে পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল। যার দুপাশে থাকবে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা থাকবে, যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকা থাকবে।
এই প্রতীকের কোনো পরিবর্তন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর ব্যত্যয় ঘটলে এক বছর কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
যেহেতু শাপলা জাতীয় প্রতীক, ফলে কোনো দল এটি প্রতীক হিসবে পেতে পারে কিনা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, “ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার নামে আমাদের একটি আইন আছে। সেখানে বলা আছে, জাতীয় প্রতীক হবে শাপলা। অতএব, যেহেতু জাতীয় প্রতীক আইন করে বলা হয়েছে শাপলা, এটা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এটা শুধু দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা যাবে।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা আবেদন পেয়েছি। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখব।”
সূত্রঃ জাতীয় প্রতীক শাপলা | বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জাতীয় প্রতীক শাপলা | জাতীয় প্রতীক শাপলা | জাতীয় প্রতীক শাপলা
দিনবার্তা | সব সময়, সব খানে
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি।
কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।
Copyright © 2025 DinBarta. All rights reserved.