সবার মনের সাধারণ জিজ্ঞাসা এক কিলো ট্রেন যেতে কতটুকু জ্বালানি পোড়ে? উন্নত দেশ গুলোর তুলনায় বাংলাদেশের জ্বালানী খরচ অনেক বেশি, বাংলাদেশে এখনো ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা হয়।
উন্নত দেশগুলিতে ডিজেল ইঞ্জিন এখন বাতিলের খাতায় চলে গেলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশ বাংলাদেশে এখনও বেশ চলছে এই ইঞ্জিনগুলো।
ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন আসতে পারে তবে এখনই বাংলাদেশ রেলওয়ের এমন কোন পরিকল্পনা নেই।
ডিজেল ইঞ্জিনের মজার বিষয় হলো- এটি সাধারণত কখনোই বন্ধ হয় না। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকলেও আওয়াজ করে ইঞ্জিন চলেই। দাঁড়িয়ে থাকলেও ডিজেল ইঞ্জিন বন্ধ হয় না। বলতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ পদ্মা সেতু হয়ে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা ট্রেন
একটা ডিজেল ইঞ্জিন চালাতে কত তেল খরচ হয়?
সাধারণত আমরা যেভাবে গাড়ির জন্য তেলের খরচ মাপি, সেভাবে মোটেই মাপা হয় না ট্রেনের ডিজেল ইঞ্জিনের জ্বালানির পরিমাণ। স্টেশনে যখন দাঁড়িয়ে থাকে তখনও ডিজেল পুড়ে চলে ইঞ্জিন চালু রাখতে।
কারণ, একটা ইঞ্জিনে অনেক রকম যন্ত্রপাতি থাকে। সেগুলিকে চালু রাখতে শক্তি প্রয়োজন, ক্রমাগত এর দরকার পড়ে। সেই কারণেই ইঞ্জিনকে চালু রাখতে হয়। না হলে একবার বন্ধ করার পর তা আবার চালু করতে এবং চলার মতো অবস্থায় আসতে আরও সময় লাগাবে পর্যাপ্ত শক্তি উত্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত। এই জন্য স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ডিজেল খরচ করতেই হয় রেল কর্তৃপক্ষকে।
আরও পড়ুনঃ শিশু অপহরণ করে ধর্ষণ, ধর্ষক গ্রেপ্তার
এক কিলো ট্রেন যেতে কতটুকু জ্বালানি পোড়ে?
বাংলাদেশে রেল পরিচালনায় ২ ধরনের লোকোমোটিভ ইঙ্গিন (ট্রেন ইঞ্জিন) ব্যবহার হয়।
১. ইএমডি লোকোমোটিভ (EMD)
পুরো নাম ইলেক্ট্রো-মোটিভ ডিজেল। এটা মার্কিন কোম্পানি। এই ধরণের ডিজেল ইঞ্জিন টু স্ট্রোকের হয়। আর এর ক্ষমতা ৪৫০০ জিএইচপি। নিষ্ক্রিয় অবস্থায় এই ইঞ্জিন প্রতি ঘণ্টায় ১১ লিটার ডিজেল পোড়ায়। আর ৮ নচে এর ডিজেল লাগে প্রতি মিনিটে ১০ লিটার।
৮ নচ হলো এই ট্রেনের জন্য সর্বোচ্চ গতি। ‘নচ’ হলো ট্রেনের গতি পরিমাপক। বাংলাদেশে এই ইএমডি লোকোমোটিভ ইঞ্জিনটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই ইঞ্জিনের গতি বেশি হলে তেল বেশি পোড়ে। শুধু গতি নয় ভর বেশি হলেও তেল বেশি পোড়ে। তবে বিভিন্ন ট্রেনের বগি সংখ্যার উপর নির্ভর করে ট্রেনের গতি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো মিজানুর রহমান জানান, একেক রুটের ট্রেনভেদে এই পরিমাপ পরিবর্তন হয়। যেমন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ৩২৪ কিলো পথ যেতে ইএমডি লোকোমটিভ এর খরচ হয় ৮৬০ লিটার ডিজেল। অর্থাৎ সুবর্ণা এক্সপ্রেসের প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ে ২.৬৭ লিটার ডিজেল।
২। আলকো লোকোমোটিভস (ALCO)
এই ইঞ্জিন দ্য আমেরিকান লোকোমোটিভ কোম্পানি তৈরি করে। এই ধরণের ইঞ্জিন ফোর স্ট্রোক। আর এর ক্ষমতা ৩৩০০ জিএইচপি। এই ধরণের ইঞ্জিন কোনও স্থানে দাঁড়িয়ে থাকলে প্রতি ঘণ্টায় ২২ লিটার ডিজেল পোড়ায়। আর চললে সর্বোচ্চ ৮ নচ গতিতে প্রতি মিনিটে ৯ লিটার ডিজেল পোড়ায়। বাংলাদেশে এই ইঞ্জিনগুলো প্রায় অনেক জায়গায় চলে বলে জানান ওই রেল কর্মকর্তা।