বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ধকল কাটিয়ে দুই বছর পর আবার বড় পরিসরে হজের আয়োজন শুরু হতে যাচ্ছে। হজের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রস্তুত ঠিক হয়নি এখনো হজযাত্রীর সংখ্যা।
সারা বিশ্ব থেকে ১০ লাখ মুসলমান এবার হজের সুযোগ পাবেন বলে সৌদি সরকার ঘোষণা দিলেও কোনো দেশ থেকে কতজন এই সুযোগ পাবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বাংলাদেশের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় হজের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও সৌদির সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সভায় জানানো হয়েছে, এবারো সৌদি আরবের প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পাদন হবে।
আরও পড়ুনঃ মাহরাম ছাড়াই ওমরাহ করতে পারবেন সৌদি নারীরা
হজযাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় এনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে আশকোনা হজ অফিসের সরাসরি সংযোগ চালু করতে এসকিলেটর বা টানেল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নেতাদের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়েছে। তবে এখনো অনেক হজ এজেন্সি তাদের প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করেনি বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান দুলাল সোমবার বলেছেন, হজযাত্রী পাঠানোর সব প্রস্তুতি সরকারের আছে। নিবন্ধনের ভিত্তিতে যাত্রী যাবে, এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।
আরও পড়ুনঃ হজ করতে পারবে ১০ লাখ হজযাত্রী, দুই শর্ত মোতাবেক
ধর্ম মন্ত্রণালয় এজন্য প্রস্তুতি সভা করেছে জানিয়ে জামালপুরের এই সংসদ সদস্য বলেন, এখনো সৌদির বিমান ভাড়া বাড়তি, তবে তা কমতে শুরু করেছে। হজ মৌসুমে ভাড়া আরো কমতে পারে বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ থেকে কতজন হজ করার অনুমতি পাবেন তা এখনো ঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার হজযাত্রী যাওয়ার কথা ছিল। সৌদি সরকার চাইলে তাদের সবাইকে পাঠাতেও ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রস্তুত আছে।
হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেছেন, বাংলাদেশিরা এবার থেকে হজে যেতে পারেবন এটা অনেক খুশির খবর। এজন্য হাবের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সাল থেকে ৫৪ হাজার হজযাত্রী অপেক্ষায় আছেন। এছাড়া প্রাক-নিবন্ধিত আরো ২ লাখ ৩ হাজার জন অপেক্ষায় আছেন। হজে যাওয়ার সুযোগ চালু হলে পর্যায়ক্রমে সবাই যেতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
গত ৩১ মার্চ হজ সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আশকোনা হজ অফিসে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হক সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সভায় গত ১৯-২৫ মার্চ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে সৌদি সফরের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
সচিব বলেন, প্রতিমন্ত্রী হজযাত্রীদের মালামাল পরিবহনে বিমানের নিয়ম মেনে পরিবহন ও রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ এর আওতায় প্রি-এরাভাল ইমিগ্রেশনসহ লাগেজ সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীর আবাসনে আগেই পৌছানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ মসজিদে মেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, এক জন নিহত
সভায় বলা হয়, প্রাক-নিবন্ধনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ৯৩৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭০ জন হজযাত্রী বেড়েছে। এতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৬০৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫১ হাজার ৮৭৬ জনসহ মোট ৫৪ হাজার ৪৮০ জন নিবন্ধিত হজযাত্রী রয়েছেন।
হজ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হজ অফিসে প্রশাসনিক ভবন, ডরমেটরি, ভবন, মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ, দুটি লিফট স্থাপন, মসজিদ ও ডরমেটরিতে এসি স্থাপন করা হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের জন্য ইমিগ্রেশন পয়েন্ট, চেকিং পয়েন্ট, ওয়েটিং লাউঞ্জ স্থাপনসহ হজযাত্রীদের ফিংগার প্রিন্ট কার্যক্রম পরিচঅলনার জন্য রুম উপযোগী করা হয়েছে।
হজ অফিসে যাতায়াতের রাস্তা সংস্কার ও হজের কার্যক্রম শুরুর আগেই হজ অফিস থেকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
হজ অফিসের পাশের ডোবা ও জলাশয় থাকায় সেখানে মশার উপদ্রব চরমে। পরিস্থিতি নিরসনে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে হজ অফিসের সরাসরি যোগাযোগ চালু করতে এসকিলেটর বা টানেল নির্মাণের কথা গুরুত্ব পেয়েছে ওই সভায়। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও হজ অফিস এনিয়ে কাজ করবে।
হজযাত্রীদের ফ্লাইট সিডিউল প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ই-পাসপোর্টের সঙ্গে ই-হজ সিস্টেমের আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হবে। এছাড়া হজযাত্রী ওষুধ, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন কেনা, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংক্রান্ত ইলেক্ট্রনিক হেলথ প্রোফাইল প্রন্তুতের পাশাপাশি ১ হাজার ২৬৯টি অনুমোদিত হজ এজেন্সির মধ্যে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৪৫৮টি নবায়ন হয়েছে। আবেদনকৃত অসম্পূর্ণ এজেন্সিী ৩৪০টি। তবে সব এজেন্সীকে নবায়নের সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।