তিন বোনের বিয়ে হয়েছিল একই বাড়ির তিন ভাইয়ের সঙ্গে। একই ছাদের নিচে বাস করছিলেন তারা। কিন্তু স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি তিন বোন আত্মহত্যা করেন।
এই মৃত্যুর জন্য তারা স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে দায়ী করেন। পুলিশ ওই তিন বোনের স্বামী, তাদের শাশুড়ি ও এক ননদকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার (৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে এএফপি।
ওই তিন বোন হলেন কালু, কমলেশ এবং মমতা মিনা। তাদের মরদেহগুলো একটি কূপের মধ্যে পাওয়া যায়। মৃত্যুর আগে তিন বোন শ্বশুরবাড়ির লোকদের দায়ী করে বার্তা রেখে যান। যৌতুক নিয়ে নির্যাতনের শিকার ছিলেন বলে ওই বার্তায় জানান তারা।
আরও পড়ুনঃ কলেজ শিক্ষকের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন মামলায়, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ৭
ভারতে বাবা-মাকে প্রায়ই তাদের মেয়েদের বিয়েতে মোটা অঙ্কের যৌতুক দিতে হয়। যৌতুক নিয়ে এমন নির্যাতনের খবরও প্রায়ই দেখা যায়।
স্বজনদের বরাতে এএফপি জানায়, ওই তিন বোন প্রায়ই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাতে নির্যাতনের শিকার হতেন। তাদের বাবা যৌতুকের টাকার যোগান দিতে ব্যর্থ হলেই তাদেরকে মারধর করা হত।
তাদের শ্বশুরবাড়ি রাজস্থানের জয়পুর উপকণ্ঠে। গত মাসে এই তিন বোনের মরদেহ তাদের শ্বশুরবাড়ির কাছের একটি কূপে পাওয়া যায়। একইসঙ্গে ওই কূপে পাওয়া যায় কালুর চার বছরের ছেলে এবং নবজাতক শিশুর মরদেহ। আর কমলেশ এবং মমতা গর্ভবতী ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনরই জয় হবে: জেলেনস্কি
আত্মহত্যা করা এই তিন বোনের এক আত্মীয় বলেন, মৃত্যুর আগে তিন বোনের এক বোন তাকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ পাঠায়। যেখানে লেখা ছিল, আমরা মরতে চাই না। কিন্তু তাদের নির্যাতনের চেয়ে মৃত্যু ভালো। আমাদের এই মৃত্যুর জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন দায়ী। আমরা একসঙ্গে মারা যাচ্ছি, কারণ প্রতিদিন মরার চেয়ে এটা ভালো।
জয়পুরের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং এটিকে আত্মহত্যা হিসেবেই বিবেচনা করছে। তিন বোনের বাবা সরদার মীনা বলেন, তার মেয়েদের জন্য জীবন ছিল নরক। স্বামীরা তার মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দেয়নি এবং প্রতিনিয়ত তাদেরকে আরও অর্থের জন্য হয়রানি করতো।
ওই বাবা আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছি, তাদের বাড়ি গেলে সেগুলো দেখতে পাবেন। বিছানা, টেলিভিশন, ফ্রিজসহ নানা জিনিস ওই পরিবারকে দেয়া হয়েছে। আমার ছয় মেয়ে, দিতে পারার একটি সীমা আছে। আমি তাদের শিক্ষিত করেছিলাম এবং তা করা খুব কঠিন ছিল। এ সময় তিনি জানান, তিনি কৃষক। আর কৃষক হিসেবে তার আয়ও সীমিত।