বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেও, গতিপথ যেকোন সময় পরিবর্তন করে সেটি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসে কিনা, সেজন্য পর্যবেক্ষণ করছেন বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থার (ই.এস.সি.এপি) তালিকা অনুযায়ী, এই বার ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে সৌদি আরব। আরবি শব্দ জাওয়াদ এর অর্থ উদার, দয়ালও কিংবা দানশীল।
শুক্রবার বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এর অবস্থান?
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ বর্তমানে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তম থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বলে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম থেকে ১০৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
ঝড়টি এখন ওড়িশা উপকূল ধরে ধীরে ধীরে পুরীর দিকে এগোচ্ছে। তবে সেটি আস্তে আস্তে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে আবহাওয়াবিদরা মন্তব্য করছেন।
তারা অনুমান করছে, ওড়িশা উপকূল ধরে এই ঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে যেয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে যাবে। তখন সেটি আরও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে বলে তারা মনে করছেন।
কেন্দ্রে ঝড়টি ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রের বাইরে বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ৬০-৭০ কিলোমিটার।
আরও পডুন
দেশে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান নির্বাচিত
যে কারণে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে
ঘূর্ণিঝড় কখন ভূমিতে উঠে আসতে পারে?
স্যাটেলাইট সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, যে গতিতে ঝড়টি এগোচ্ছে, তাতে আগামী রবিবার ৫ই মে দুপুরের পর ওড়িশা বা পশ্চিমবঙ্গে উঠে আসতে পারে।
যেভাবে ঝড়ের গতি দেখা যাচ্ছে, এটা খুব প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে তারা মনে করেন।
তবে ঝড়টি এখনো একটু একটু করে পূর্ব দিকে ঘুরছে। সেটা যদি গতি পথ পরিবর্তন করে আবার গভীর সাগরে চলে আসে, তাহলে সেটা আরও শক্তি সঞ্চার করতে পারে বলে সতর্ক করেন আবহাওয়াবিদরা।
আবার ভূমিতে যদি উঠে আসে তখন ঝড়টি ঘূর্ণিঝড় থেকে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
ভূমিতে আঘাত করার পর তার প্রভাবে অন্তত দ২ দিন ধরে হালকা ঝড়ো হাওয়া এবং সাথে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
দেশের দিকে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আসার ঝুঁকি কতটা?
দেশের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, ঝড়টি এখনো সাগরে থাকলেও আজ বিকালের দিকে একটি মোড় নেয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
”সেটি হলে টার্ন নিয়ে হয়তো কিছুটা বাংলাদেশের দিকেও এগোতে পারে। যার ফলে ভারতের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হলেও কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। এই কারণে আমরা এখনো গভীরভাবে ঝড়টি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি। আজ রাতের মাঝে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে” তিনি বলেন।
তিনি বলেন, শনিবার বিকালের মধ্যে ঝড়টির গতিপথ পরিষ্কার হয়ে যাবে আশা করা যাই। এটি ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের দিকেও যেতে পারে, আবার গতিপথ পরিবর্তনও করতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়যে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য হয়ছে
বৃষ্টিপাত
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এর মধ্যেই ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
আগামী ২ দিন ধরে এই বৃষ্টিপাত চলতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।