স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে আগামী রবিবার ঢাকার একটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক টিকাদানের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বুস্টার ডোজ দেয়ার কর্মসূচি শুরু করা হবে এবং পরে এর আওতা ক্রমশ বাড়ানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একজন ডাঃ সামছুল হক বলেন সর্ব প্রথম বয়স্কদের টিকা দেয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বুস্টার ডোজ দেয়ার কার্যক্রমের সূচনা হবে।
আগামী রবিবার এর আনুষ্ঠানিকতা করে বুস্টার ডোজ বিষয়ক নতুন কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক।
দেশে ২০২০ সালের ৮ই মার্চ সর্ব প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় এবং এই বছরের জানুয়ারি থেকে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হয়।
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন দেশের প্রায় ৭কোটি মানুষকে করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজ এবং প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ করে টিকা দেয়া হয়েছে।
আরও প্রায় ৫ কোটি টিকার ডোজ বর্তমানে সরকারের হাতে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন
করোনাভাইরাসের বুস্টার ডোজ কী, কারা পাবে
করোনা ভাইরাসের টিকা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যারা ইতিমধ্য সম্পন্ন করেছেন তাদেরকেই একটি নির্দিষ্ট সময় হবার পর তৃতীয় ডোজ নিতে হবে এবং এটিকেই বুস্টার ডোজ বলা হচ্ছে।
তবে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ঠিক কতদিন পর বুস্টার ডোজ নেয়া হবে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে যেই টিকা দেয়া হয়েছিলো সেটিই তৃতীয় ডোজ হিসেবে দেয়া হবে কি-না তা এখনও নিশ্চিত নয়।
সামছুল হক অবশ্য বলেছেন আগামী রবিবার যাদের টিকা দিয়ে বুস্টার ডোজের সূচনা হবে তাদের ফাইজারের টিকা দেয়া হবে, যদিও তারা আগের দুই ডোজ হিসেবে কোন টিকা নিয়েছিলেন সেটি তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
“আমরা ফাইজার দিয়ে শুরু করবো। এতটুকুই এখন বলতে পারছি। রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানাবেন বলে আশা করছি,”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য এর আগেই এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন যে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি ও চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ফ্রন্টলাইন ফাইটারদের বুস্টার ডোজ দেয়া হবে।
সময়ের সাথে সাথে করোনার টিকার সুরক্ষা সক্ষমতা কমে আসায় আরও আগেই উন্নত দেশগুলোতে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করেছে।
এখন করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট (অমিক্রন) আসার পর দেশেও বুস্টার ডোজ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতি ও টিকার সংগ্রহ
দেশে গত বছর ৮ই মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ই মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের কারনে মৃত্যুর খবর দিয়েছিলো স্বাস্থ্য প্রশাসন।
পরে এ বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় অনেক।
এ বছরের ৭ই জুলাই প্রথম বারের মতো এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছড়িয়ে যায়। বেশ কিছু সময় দৈনিক ২০০ করে মৃত্যুর পর আগস্টের মাঝামাঝি পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে।
এরপর চলতি বছরের ১৯শে নভেম্বর প্রথম বারের মতো কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ আজ শনিবার ২ জনের মৃত্যু ও ১৯১ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অপরদিকে টিকার জন্য ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি করেছিলো বেক্সিমকো ও সরকার। এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আনার কথা ছিলো বেক্মিমকোকে।
কিন্তু সিরাম সেই চুক্তি অনুযায়ী সঠিক সময়ে টিকা সরবরাহ করতে পারেনি ভারত সরকার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায়।
তবে এর মধ্যে বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সসহ আরও অন্য নানা সূত্র থেকে টিকা পেতে শুরু করায় প্রাথমিক সংকট কাটিয়ে পুরোদমে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি ৭৪ লাখেরও বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ আর দুই ডোজ টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে ৪ কোটি ৪১ লাখেরও বেশি মানুষকে।
এর বাইরেও প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ আর দুই ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর।
দেশে বর্তমানে ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক টিকা দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী শুক্রবার জানিয়েছিলেন যে বর্তমানে সরকারের হাতে প্রায় ৪ কোটি ৭৫ লাখের মত টিকা আছে।